ইহসান শব্দটা অত্যন্ত অর্থবহ একজন মুসলিমের জীবনে। মানুষ ব্যক্তি জীবনে অনেক ভূল-ত্রুটি করে কিন্তু মুমিন মুসলিম ভূলের উপর টিকে থাকতে পারে না। তাকে সঠিক পথ খুঁজে নিতে হয়। আর এই পথ খোঁজার ক্ষেত্রে তাকে নিজের দোষ-ত্রুটি সমূহ খুঁজে বের শুরুকরা থেকে আল্লার নিকট বিনীতভাবে আত্নসমর্পণ করতে হয়, তবেই মানুষ ইহসানকারীদের দলে দাখিল হতে পারে।
তাই আমরা জেনো নিজেকে আগে জানি এবং ইহসানের পথে দুনিয়াকে দেখি যে আমরা কি করি? কি ভাবি?
দুনিয়া মানুষের পরীক্ষাকেন্দ্র। মানুষকে তিনি বিবেকদান করেছেন এবং সৃষ্টির সেরা করেছেন। তাই ভাল কর্ম ও খারাপ কর্মের দায়ভার শুধু মানুষের নিজেরই। কোন অবকাশ নেই যে মানুষ আল্লাহর কাছে কিছু লুকাবে৷ আল্লাহ তো সব দেখেন, শুনেন এবং জানেন তার ইচ্ছা ব্যাতিত তো কিছুই ঘটেই না এই বিশ্বাসই তো যথেষ্ট। ভালো কিছু এবং মন্দ কিছু তার ইচ্ছাই ঘটে। তাই বলে মানুষ মন্দ করেও যে এটা বলে না আল্লাহর ইচ্ছাই হয়েছে! কারন তিনি দুনিয়াতে মানুষকে বিবেকদান করে ছাড় দিয়েছেন।
কত ছোট ছোট ভূল-ভ্রান্তি তিনি এম্নেই ক্ষমা করে দেন। আর যদি সেই গোনাহের জন্য তিনি আমাদের পাকড়াও করতেন! আমরা যা অনেক কিছু গোনাহ ও মনে করি না?? দেদারসে করছি বা করে যাচ্ছি তার জন্য যদি সাথে সাথে ধরতেন ? তাহলে দুনিয়ায় কেউ টিকতে পারতোনা। কাফের এক ঢুক পানিও পান করতে পারতোনা। তিনি পাকড়াও করেন যা অধিক সীমালঙ্ঘন তার জন্য। এমন কিছু সীমালঙ্ঘন অপরাধ যা আল্লাহ দুনিয়ায়ই তার শাস্তি দিয়ে থাকেন আর আখিরাত তো আছেই (আল্লাহ আলাম)। সেই সীমালঙ্ঘন করা থেকে আমাদেরকে নিজেকে বাচাঁতে হবে।
অথচ আমাদের জীবন ব্যবস্থাপনায় আল্লাহর আদেশ নির্দেশ কতটা সুস্পষ্ট। আমরা এখনো অনেক কিছুই জানি না ? আমরা অজুহাতও পেশ করতে পারি, আমরা জানি না। কিন্তু আমরা কেন জানি না ? অথচ দ্বীন শিক্ষা আমাদের জন্য ফরজ। আমরা জান্নাতে যেতে চাই? কিন্তু আমরা সে অনুযায়ী কাজও করি না? সেটা তো মৃত্যুর পরের কথা যা চিরস্থায়ী! কিন্তু আমরা তো দুনিয়াতেও ভাল থাকতে চাই।
আমরা কি তা ভেবে দেখেছি? আমরা কি করি? আর কত ছোট-বড় গোনাহের জন্য এমনিতেই তো শাস্তির যোগ্য হয়ে পড়ে মানুষ? তা কি ভাবি?
কত সহজ ভাবাটাই না ভেবে ফেলি? সব কিছু খুব সহজ ভাবেই ভাবি এটা মনে করে যে তিনি ক্ষমা করে দিবেন? তাও কি খুব সহজ? ক্ষমা পাওয়ার জন্যও তো শর্ত আছে! সে সম্পর্কে তো বেখায়লই? তাই নয় কি? তাই নিজের কৃতকর্মের উপর বেখেয়াল থেকেই নিজের উপর এবং অন্যের উপর জুলুম- অত্যাচার, অন্যায়-ধোঁকাবাজি করি।
মানুষ কিভাবে ভূলে যায় যে-- আল্লাহ আমাদের পাকড়াও করবেন না? আর এভাবেই ছেড়ে দিবেন? এতোই কি সহজ? অন্যায় করে খুব সহজেই পার পাওয়া যাবে? ভাল আর মন্দ কি কখনো এক হয়? ন্যায় আর অন্যায় কি কখনো সমান হয়? তেমনি ভাবে ভালো অন্তর আর খারাপ অন্তর কি কখনো এক হবে?? মহান আল্লাহ তো মানুষের নিয়্যাত আর অন্তর দেখেন! তাহলে অশুদ্ধ অন্তর নিয়ে অন্যায় করে কিভাবে পার পাওয়া যাবে?
আবার আমরা এমনটাও করি! দোষ করি আমরা আর কিছু হলে খুব সহজেই বলে ফেলি আল্লাহ তুমি আমার সাথেই কেন এমন করলে? আমার সাথেই এমন হয়? ভাগ্যটা/কপালটাই খারাপ এসব বলে ফেলি। হায়! এতটুকু নিজের কর্মের দিকেও একবার ফিরে তাকাই না ? যে নিজে কি করেছি? এমন কথা বলা অবশ্যই অনুচিত। মানুষ তার নিজের কৃতকর্মের ফল ভোগ করে। আর সেই সাথে আমরা অধৈর্য্য এবং হতাশ হয়ে যাই যা অনুচিত।
সব কিছু এতো সহজ নয় আবার এতো কঠিনও নয়। কঠিন তো মুনাফিক, মুশরিকদের জন্য। আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের জন্য চারটি বিষয়বস্তু আবশ্যক করেছেন।
মহান আল্লাহর প্রশংসা ও তার পবিত্রতা বর্নণা করি। তবে এরপরেও তো তিনি সব খেয়াল করেন। সকল কষ্ট, বেদনা, অভিযোগ, স্বীকারোক্তি তিনি গ্রহণ করেন। ধৈর্যের জন্য আর তার কাছে চাওয়ার জন্য। তিনি তো সবার কথাই শুনেন। কাফেরদের কথাও তো শুনেন। তিনি তো কারো মুখাপেক্ষী নন বরং সকল কিছুই তার মুখাপেক্ষী। সাহায্য, ক্ষমা, বিচার, অনুনয়, আবেদন, দুঃখ প্রকাশ, চাওয়া তো তার কাছেই চাইবো। আমাদের কাজই হচ্ছে তার কাছে চাওয়া। দুয়া একটা বড় ইবাদত।
আমাদের দুঃখ, কষ্টের আর মানুষদের করা জুলুম, অন্যায় অভিযোগের তো শেষ নেই আর যত পাপ যা কিছু আছে । কার কাছে দুঃখ প্রকাশ করব! কার কাছে মাফ চাইব? আর কার কাছে বিচার চাইব ? তার কাছেই তো? যার কাছে কিছু চাইলে বরং তিনি খুশি হন। আমাদের মহান রব আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার কাছে। যার কাছে অসম্ভব বলতে কিছু নেই। যার কাছে আছে সব কিছুর সমাধান৷ যার ভান্ডার অফুরন্ত।
তবে তিনি তার ইচ্ছায় আমাদের ক্ষমা করে দিবেন সব... সব বলতে সব আমরা তার দিকে যদি ফিরে যাই। তার কাছে তওবা করি এবং আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক না করি। আল্লাহ চান যে আমরা তার দিকেই ফিরে যাই তাই তাওবার দরজা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খোলা রাখা হয়েছে। নিরাশ হওয়ার কোন সুযোগই আল্লাহ রাখেনি যদি মানুষ তা কাজে লাগায়। আর মানুষ জানে না তার মৃত্যু কখন?
আর আল্লাহ তায়ালা তার তাওবাই কবুল করবেন! যে তওবা করার ক্ষেত্রে খুবই আন্তরিক। আর যে তওবার শর্তগুলো পূরণ করে তা আল্লাহর হক এবং বান্দার হকের ক্ষেত্রেই হোক । আল্লাহর হক আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় ক্ষমা করে দিতে পারেন কিন্তু বান্দার হক আল্লাহ বান্দার কাছেই দিয়েছেন। আর আমাদের মহান রব ন্যায়বিচারক। তিনি যেনো আমাদেরকে সুযোগ দেন হক বা শর্তগুলো পূরণ করার, আর তওবা এবং দোয়া কবুল করে যেনো তার আনুগত্যকারীদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে নেন।
তবে দোয়া চাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা যা করি! আমার রবের সাথে আমার মালিকের সাথে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তার সাথে কথা বলতে আমার কিসের সংকোচ? আমার কার দরকার হবে? কোন উসিলারই তো না।
এবং আমাদের রব আর আমাদের দোয়া চাওয়ার মধ্যে কোন কিছুরই কোন উছিলার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন শুধু তারই রহমতের-দয়ার আর তারই সুন্দর গুনাবলীর উছিলা। আমাদের যা কথা যা নিবেদন সব তাকেই বলব। আমরা যেনো দোয়া চাওয়ার ক্ষেত্রেও কোন শিরক না করি! অনেক সময় আমরা অন্যের উছিলা চাই যা অত্যন্ত গর্হিত। আমরা আমাদের রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরও উছিলা চাইতে পারবো না। উলি ওলামা পীর ফকির তো দূরের কথা। আমরা শুধুই নিজের নেক আমল এবং মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের রহমত ও তার গুণাবলি দিয়েই তার কাছে সাহায্য চাইতে পারবো। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাই শিক্ষা দিয়েছেন। এ ব্যপারটা যেনো আমরা নজর আন্দাজ না করি কারন শিরক এর বিষয়টা অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর আমরা যেনো অহংকারে দাম্ভিক না হয়ে যাই। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এই ব্যাপারে।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা অবশ্যই প্রার্থনা কবুলকারী৷ তিনি সূক্ষ্ম বিচারক।
যিনি সব সৃষ্টি করেছেন সব.... এই ভালো কেও এই মন্দ কেও! তাহলে ? কি আছে তার অগোচরে?
তবে মুমিনগণ কখনো হতাশ হয় না সে তার ভূল সংশোধনের চেষ্টা আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা মার্জনা চাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতেই থাকে। আর ভয় করে আল্লাহর শাস্তি কে যা বড়ই কঠিন।
আর তাই আমাদেরকে ইহসানকারী হতে হবে। আমাদেরকে সব বিষয়ের ক্ষেত্রেই ন্যায়ের নীতিতে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হবে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার জন্যই।
এবং তা ন্যায়ের সাক্ষ্যদানের ব্যাপার থেকে শুরু করে যেকোনো তুচ্ছ সঠিক বিষয়ের উপর হোক না কেন?
আমরা যদি ইহসান করি আমার রবের সাথে, তার সৃষ্টির সাথে তিনিও তো আমাদের প্রতি ইহসান করবেন। আল্লাহ বান্দাকে আযাব ও দেন আর তিনি বান্দাকে পরীক্ষাও করেন। কে কোন দলের সেটা তো বান্দার কর্মেই অন্তর্ভুক্ত। তিনি তার প্রিয় বান্দাকেই পরীক্ষা করে থাকেন । তবে ভালো টা তো সেইটাই হবে যদি সে ইহসান কারী হয়। আর মুমিন কখনো নিরাশ হয় না। সে তার ভূল সংশোধনে সদা তৎপর। মুমিনই ইহসানকারী আর ইহসানকারী হকের উপর অটল থেকেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা মার্জনা চায় এবং মানুষ ও তার রবের সৃষ্টির সাথে ইহসান করে। ধৈর্য ধারণ করে তার রবের নিকট থেকে মহা পুরষ্কারের আশায়।
ইহসান হলো সদাচরণ, সঠিক বা হক। মহান রব্বুল আলামীন যেনো ইহসানকারীদের দলে অন্তর্ভুক্ত করেন এটাই ফরিয়াদ। একজন মুমিন ব্যক্তি সে তার রবের প্রতি ইহসান করে, তার নিজের প্রতি ইহসান করে এবং তার রবের সৃষ্টির প্রতিও ইহসান করে। এটাই কথা।
আর আমাদের মহান রব তওবাকারীর আন্তরিক তাওবা কবুল করে তার মন্দকাজ সমূহ কে মুছে দেন। আর তিনি আনুগত্যশীল এবং ইহসানকারীদের ভালোবাসেন।
Comments
Post a Comment